নায়ক ফারুক আর নেই

img

নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘ মিয়া ভাই ’ খ্যাত কিংবদন্তি অভিনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা- ১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ওরফে ফারুক মারা গেছেন( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) । সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন । 
 
 সিঙ্গাপুর থেকে ফারুকের মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন তার স্ত্রী ফারহানা পাঠান । তিনি জানিয়েছেন, সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় অভিনেতা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন । এছাড়া দেশ থেকে নায়কের ভাতিজি আসমা পাঠান রুম্পাও খবরটি নিশ্চিত করেছেন । 
 
 দেড় বছরের বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফারুক । সেখানে তিনি লড়াই করছিলেন বিরল নিউরোলজিক্যাল রোগ জিবিএস( Guillain Barre Syndrome)- এর সঙ্গে । 
 
 ২০২১ সালের ৮ মার্চ থেকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফারুক । নিয়মিত চেকআপের জন্য সেখানে যান অভিনেতা । সে সময় চেকআপের পর তার রক্তে ইনফেকশন ধরা পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় । পরে জানা যায় তিনি জিবিএস রোগে আক্রান্ত । চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২১ সালের ১৫ মার্চ তার খিঁচুনি উঠলে তাকে নেয়া হয় আইসিইউতে । এর পাঁচ দিন পর হঠাৎ জ্ঞান হারালে তাকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয় । 
 
 ওই সময় এক মাস ছয় দিন একেবারে অচেতন ছিলেন ফারুক । চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন না । ফলে এপ্রিলের শুরুতে ছড়িয়ে পড়ে তার মৃত্যুর গুজব । সে সময় এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তার পরিবার । গুজব না ছড়াতে সবাইকে অনুরোধ করেন । 
 
 ঠিক এক বছরের মাথায় গত বছরের ১০ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় গুজব ওঠে, ফারুক মারা গেছেন । এ বিষয়ে রীতিমতো একটি পোস্টার শেয়ার করা হয় ফেসবুকে । সেখানে লেখা হয়, ‘ শোক সংবাদ, চিত্রনায়ক ও ঢাকা- ১৭ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক পাঠান আর নেই । তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর । ’ 
 
 দ্বিতীয় দফার এ গুজবের অবসান ঘটান চিত্রনায়ক জায়েদ খান । তিনি অভিনেতা ফারুকের সঙ্গে তোলা একটি ছবি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে লেখেন, ‘ আমাদের সবার প্রিয় মিয়া ভাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন । কেউ দয়া করে গুজব ছড়াবেন না । সবাই তার জন্য দোয়া করবেন । ’ 
 
 তবে এবার আর গুজব নয়, সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়াভাই । 
 এর আগে ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন ফারুক । বিশ্বজুড়ে তখন চলছিল করোনাভাইরাসের তাণ্ডব । লকডাউনের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সব দেশের ফ্লাইট ছিল বন্ধ । ফলে কার্গো বিমানের এক বিশেষ ফ্লাইটে সে সময় সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছিল ফারুককে । 
 
 ওই বছরের মাঝামাঝি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এই সাংসদ- অভিনেতা । এক মাসেরও বেশি ধরে তিনি প্রথমে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসাপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা করান । এরপর তার করোনা নেগেটিভ হয় । তবে শারীরিক জটিলতা যাচ্ছিল না । তাই বাধ্য হয়েই যেতে হয়েছিল সিঙ্গাপুরে । সে সময় সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন ‘ মিয়া ভাই ’ । 
 
 তারও আগে ২০১২ সালের জুলাইয়ে এক মাস ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফারুক । সে সময় তিনি কিডনির রোগে ভুগছিলেন । ব্যাংককে কয়েক মাস চিকিৎসা করিয়ে ২০১৩ সালের ৩০ আগস্ট ভর্তি হন সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে । সেখানে কয়েক মাস চিকিৎসা শেষে ২০১৪ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরে আসেন । এবার আর ফিরলেন না । 
 
 ফারুকের প্রকৃত নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু । ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওরে তার জন্ম । চলচ্চিত্রে এসেছিলেন ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘ জলছবি ’ সিনেমার মাধ্যমে । অভিনয় করেছেন শতাধিক চলচ্চিত্রে । উল্লেখযোগ্য সিনেমা ‘ লাঠিয়াল ’, ‘ সুজন সখী ’, ‘ নয়নমনি ’, ‘ সারেং বৌ ’, ‘ গোলাপী এখন ট্রেনে ’, ‘ সাহেব ’, ‘ আলোর মিছিল ’, ‘ মিয়া ভাই ’ । 
 
 এর মধ্যে ‘ লাঠিয়াল ’ সিনেমাটিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন ফারুক । ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরে তাকে দেওয়া হয় আজীবন সম্মাননা । বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে সফল ও সেরা নায়কদের একজন হিসেবে স্বীকৃত । 
 
 ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা- ১৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ফারুক । ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ক্ষমতাসীন এই দলটির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত । ১৯৬৬ সালে ছাত্রনেতা হিসেবে যোগ দেন ছয় দফা আন্দোলনে । সে সময় তার নামে ৩৭টি মামলা হয় । এরপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন ফারুক ।