আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক:
মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখায় মৃতের সংখ্যা বুধবার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে । ঝড়ের পর লোকেরা ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে শুরু করেছে এবং হতাহতের সংখ্যা গণনা শুরু করেছে । নিহতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধির শঙ্কা করা হচ্ছে, কারণ এখনো শত শত নিখোঁজ বলে দেশটির সংবাদ মাধ্যম দ্য ইরাবতী জানিয়েছে ।
চিন রাজ্য, সাগাইং এবং ম্যাগওয়ে অঞ্চল অতিক্রম করার আগে মোখা রবিবার রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের পশ্চিম উপকূলে ল্যান্ডফল করে । মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি এটি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে ফেলেছে, কাঠের বাড়ি এবং মাছ ধরার নৌকা ভেঙে দিয়েছে এবং হাজার হাজার গাছপালা ধ্বংস করেছে ।
রাখাইন রাজ্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী হচ্ছে রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ের কাছে শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ।
অ্যালিন ইয়াং স্বেচ্ছাসেবক গোষ্ঠীর মতে, বুধবার দুপুর পর্যন্ত ১১টি শিবিরে প্রায় ১৩০ জন রোহিঙ্গা ঝড়ের কারণে নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে । সিতওয়েতে ১৩টি রোহিঙ্গা শিবির রয়েছে, যেখানে ১ লাখের বেশি লোক বাস করে ।
ঝড়ের কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যার কারণে অনেকে মারা গেছে, অন্যরা প্রবল বাতাসের কারণে গাছ ভেঙে আহত হয়ে মারা গেছে ।
স্বেচ্ছাসেবকরা বলেছেন, তারা ১১০টি মৃতদেহ দাফন করেছেন, যার মধ্যে ৩০টি শিশু । আলিন ইয়াংয়ের একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেছেন, ‘ আহতের সংখ্যা অনেক বেশি । আরও মৃত্যু হবে, কারণ বন্যার কারণে শত শত মানুষ নিখোঁজ । ’
এএফপি জানিয়েছে, সিতওয়ের বু মা এবং নিকটবর্তী খাউং ডোকে কার নামে আরও দুটি রোহিঙ্গা গ্রামে কমপক্ষে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ।
শিবিরের বাসিন্দারা বলেছেন, মিয়ানমারের জান্তা সৈন্যরা ঝড়ের আগে তাদের সরিয়ে নিতে ১০টি ট্রাক নিয়ে এসেছিল, কিন্তু অনেকে সঠিক আশ্রয়ের অভাবে সরে যেতে অনিচ্ছুক ছিল, পাশাপাশি অনেকে মনে করেছিল ঘূর্ণিঝড় এতটা গুরুতর হবে না । সৈন্যরা কিছু বয়স্ক লোককে অস্থায়ী আশ্রয়ে নিয়ে গিয়েছিল ।
থেট কে পাইন গ্রামের একজন রোহিঙ্গা বলেছেন, ‘ থাই চাউং এবং কাউং টাকা গ্রামে মাত্র দুটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে । প্রতিটির ধারণক্ষমতা মাত্র ৫০০ জন । অন্যরা স্কুল এবং হাসপাতালে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ছিল যা ইতোমধ্যে পূর্ণ । যদি পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র থাকত, তবে মৃতের সংখ্যা এত বেশি হতো না । ’
জাতিসংঘের শরণার্থী কার্যালয় জানিয়েছে, ঝড়ে বাস্তুচ্যুত শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদন তদন্ত করছে তারা ।
রাজ্যের রাজধানীতে পাঁচজন নিহত হয়েছে যার মধ্যে একজন মহিলাও মারা গিয়েছেন । তিনি যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন সেই ভবনটি ভেঙ্গই মারা যান ।
মিয়ানমারের শাসন- নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া মঙ্গলবার জানিয়েছে, রাথেদাউং টাউনশিপের একটি গ্রামে মঠ ধসে ১৩ জন নিহত হয়েছে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে একটি ভবন ধসে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে । আগের দিন, বিশদ বিবরণ না দিয়ে ঝড়ের কারণে পাঁচজন মারা গেছে বলে জানিয়েছে ।
পোন্নাগিউন টাউনশিপে, স্থানীয় লোকজনের মতে, ঝড়ের আঘাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে । জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয়( ওসিএইচএ) বলেছে, তার প্রাথমিক অনুমান ইঙ্গিত করে যে প্রায় ৩২ লাখ মানুষকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয় এবং তাদের সম্ভবত মানবিক সাহায্য প্রয়োজন রয়েছে ।
এদিকে রাখাইনে, স্থানীয় উদ্ধারকারী দল এবং স্বেচ্ছাসেবকদের মতে, বুধবার পর্যন্ত সরকার এবং সাহায্য সংস্থাগুলির কাছ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ত্রাণ ও সহায়তা এখনও পৌঁছায়নি ।
জান্তা মিডিয়া বাণিজ্যিক কেন্দ্র ইয়াঙ্গুনে একটি জাহাজে রাখাইনের জন্য ত্রাণ সরবরাহের ফুটেজ প্রচার করেছে ।
মিইত্তা ইয়াংচি ফাউন্ডেশনের একজন সদস্য, স্থানীয় উদ্ধারকারী দল যেটি সিতওয়েতে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে । তিনি বলেছেন, ‘ আমরা সবাই এখন স্বনির্ভরতার মোডে আছি । ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য চালের মজুদ কমে যাচ্ছে ।
থেত কায়ে পাইন গ্রামে ঝড়ের আঘাতে আহত রোহিঙ্গারা এখনও তাদের বাড়িতে রয়েছে, অন্যদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে টিকে আছে তারা । এমনকি যে কোনো প্রতিকারে নিজেদের চিকিত্সা নিজেরাই করছে ।