নিবিড় পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া, শয্যাপাশে কোকোর স্ত্রী শর্মিলা

img

নিজস্ব প্রতিবেদক:

এবারই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে হাসপাতালে ভর্তি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার লিভার, হৃদযন্ত্র ও কিডনির সমস্যা জটিল অবস্থায় রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে তার লিভার প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। দিন দিন তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে। স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্যারামিটার ওঠানামা করায় চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। আশানুরূপ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাকে হাসপাতালেই থাকতে হবে।

বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারনের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড সূত্র  এসব তথ্য জানায়।

মেডিকেল বোর্ড সূত্র জানায়, খালোদা জিয়ার অবস্থা ভালো নয়। সকালে একটু ভালো থাকলে, বিকালে আবার অবনতি হচ্ছে। রক্তক্ষরণ না হলেও এমন পরিস্থিই তৈরি হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই ইলেকট্ররাইল ইমব্যালেন্স হচ্ছে। খাবারের ঠিকমতো খেতে চাচ্ছেন না। রুচি কমে গেছে। খালেদা জিয়াকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। লিভারের মতো জটিল চিকিৎসায় অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ারও ঝুঁকি থাকে। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে চিকিৎসকদের খুব সতর্কতার সঙ্গে ওষুধ দিতে হচ্ছে।

মেডিকেল টিমের এক সদস্য বলেন, লিভারের পুরনো জটিলতা বাড়ায় অন্য রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছু বিষয়ে চিকিৎসকদের কিছু করার থাকে না। এজন্যই বারবার বিদেশে মাল্টিপল ডিজিস সেন্টারে নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।

সেখানে জরুরি ভিত্তিতে তার লিভার প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন।

গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত এ তথ্য তাঁর মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করা হয়েছিল ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর। তখন থেকে প্রায় দুই বছরে তাঁর পরিপাকতন্ত্রে কয়েকবার রক্তক্ষরণ হয়েছে। এর আগে গত ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় পাঁচ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তাঁর হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদ্‌রোগে ভুগছেন।

এদিকে বিএনপির চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি দেশে এসেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর একটায় তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর বনানী ডিওএইচএসে মায়ের বাসায় যান। সেখান থেকে তিনি অসুস্থ শ্বাশুড়িকে দেখার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে যান।

বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবারের পক্ষ থেকেও তাঁকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। সেই আবেদনের সঙ্গে মেডিকেল বোর্ডের লিখিত পরামর্শও যুক্ত করা হয়। কিন্তু সরকার তাতে সায় দিচ্ছে না। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাফ জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ আইনে নেই।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে তিনি কারাবন্দি হন। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। তখন থেকে তিনি গুলশানের বাড়িতে থাকেন। প্রতি ছয় মাস পরপর সরকার তাঁর মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে।