নিজস্ব প্রতিবেদক:
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে রাজশাহীর পুঠিয়ার মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ খাঁর ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত চার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মঙ্গলবার বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর ছিলেন ঋষিকেশ সাহা ও জাহিদ ইমাম। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।
এর আগে গতকাল সোমবার রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ঠিক করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার আগে গত ৮ জুলাই রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল।
আসামির বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) প্রসিকিউশনের আনা ১৫ জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি পেশ করেন। অন্যদিকে, আসামির পক্ষে কোনো সাফাই (ডিফেন্স) সাক্ষী ছিল না।
সেদিন যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাদের সহযোগীদের নিয়ে এ মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা-হত্যাসহ যেসব অপরাধ করেছে মামলার শুনানি ও যুক্তিতর্কে সেসব তথ্য-প্রমাণ, সাক্ষ্য আমরা আদালতে তুলে ধরেছি। ভিকটিমসহ ভিকটিম পরিবারের ১৪ জন চাক্ষুস সাক্ষী আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ফলে আমরা আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছি ট্রাইব্যুনালের কাছে।’
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেছিলেন, এ মামলার সাক্ষী এবং পুঠিয়ার সাঁওতাল পল্লীর লোকজনের সঙ্গে আসামির বাবার জমি-সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। ১৯৬৪ সালে জমি বিনিময় করে তারা এসেছিল। কিন্তু দেশ স্বাধীনের বছরে এসে সাঁওতালরা ৫০ একর জমি ফেরত চাইলে আসামি, আসামির বাবা এবং এলাকার লোকদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে আসামির বাবাও মারা যান। সাক্ষীরা সে সুযোগ নিয়ে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে।’
মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত চলাকালীন নাশকতার অন্য এক মামলায় গ্রেপ্তার হন আসামি আব্দুস সামাদ। ২০১৭ সালে ২৪ জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়। প্রায় সাড়ে ১১ মাস পর মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়।
কে এই ফিরোজ খাঁ:
এ মামলার আসামি মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ খাঁর বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়ার ত্রিমোহিনী বাজারের কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামে। ১৯৭১ সালে দেশে যখন স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়, সময় তার বয়স ২০ বছরের মতো। প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, সামাদের পূর্বপুরুষ এদেশে এসেছিলেন ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন।
মামলার অভিযোগপত্রের বিবরণ অনুযায়ী, চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা সামাদ এক সময় মুসলিম লিগ করলেও একাত্তরে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে ভেড়েন এবং স্থানীয় রাজাকার বাহিনীতে নাম লেখান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ নিয়ে পুঠিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান এবং চারজন সাঁওতালসহ ১৫ জনকে হত্যা, ২১ জনকে নির্যাতন, আট থেকে ১০টি বাড়িঘরে লুণ্ঠন এবং ৫০ থেকে ৬০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগে অংশ নেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে এ মামলায়।