আম বয়ানের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু

img

গাজীপুর প্রতিনিধি:

টঙ্গীর তুরাগ তীরে ৫৫ তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে আজ শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি)। তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি ভারতের মাওলানা মুফতি শেহজাদের আ’ম বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। ১৯ জানুয়ারি দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে তা শেষ হবে। 

ইজতেমাকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ময়দানের সকল কাজ শেষ হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল এখন টঙ্গীমুখি।  ইবাদত-বন্দেগীর মোক্ষম সময় হৃদয়ে ধারণ করে মুসল্লিদের স্রোত টঙ্গী অভিমুখে বেড়েই চলছে। শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের মাওলানা মোশারফ হোসেন জুমার জামাতের ইমামতি করবেন বলে জানা গেছে।

বিশ্ব ইজতেমা আজ শুক্রবার শুরু হলেও গত ১৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে জামাতবদ্ধ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন। দেশের ৬৪টি জেলার মুসল্লিরা তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন। কোন কোন জেলার মুসল্লিরা কোন খিত্তায় অংশ নেবেন সে দিক নির্দেশনাও ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। ময়দানে মুসল্লিদের অবস্থানও জেলাওয়ারি নির্দিষ্ট খিত্তায় (ভাগে) বিভক্ত করা হয়েছে। 

ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রায় ১০-১২ হাজার বিদেশি মেহমান আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন বলে আয়োজক কমিটির মুরুব্বিরা আশা করছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশের প্রায় ৩ হাজার ১৯জন বিদেশি মেহমান ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত নিবাসে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী হাজী মো. মনির হোসেন ও মো. সায়েম। 

তবে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও কাশ্মির থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক মুসল্লি ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ভারতের নাগরিকত্ব বিলের কারণে ভিসা জটিলতায় অনেক চিল্লাধারী ইজতেমার সাথী বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছেন না বলেও জানান তারা। 

দেশি-বিদেশি ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরামগণ ছয় উসুল যথা-ঈমান, নামাজ, এলেম ও জিকির, একরামুল মুসলিমীন, তাসহীহে নিয়ত, দাওয়াত ও তাবলীগ সম্পর্কে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক মূল্যবান বয়ান রাখবেন। মূল বয়ান সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ভাষায় তরজমা করা হবে। 

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জানান, বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও থাকছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা। র‌্যাব, পুলিশ ও সাদা পোশাকে থাকছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় আট হাজার সদস্য। পুরো ইজতেমা ময়দানজুড়ে সিসিটিভি, ওয়াচ টাওয়ার ও মেটাল ডিটেক্টরে নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। নিরাপত্তা বলয় থাকবে ইজতেমা মাঠ ও মাঠের বাইরে।

প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতের পর দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠানের জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ইজতেমা মাঠের দায়িত্ব বুঝে নেন। গত বুধবার বাদ মাগরিব মাওলানা সা’দ অনুসারী দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের ৩২ সদস্যের দল ময়দানে এসে পৌঁছে।

আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য প্রকৌশলী শাহ মো. মুহিবুল্লাহ জানান, ইজতেমা ময়দান প্রস্তুত করতে তাবলিগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবীরা ছাড়াও ডেসকো, তিতাস, ওয়াসাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলো অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম মাঠ পরিদর্শন করে বলেন, সরকার দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের সুবিধার্থে ইজতেমা মাঠে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। ১৩টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্বেও প্রায় সাড়ে তিন কোটি গ্যালন খাবার পানি ও ওজু-গোসলের পানি সরবরাহ করা হবে। ৮ হাজারের বেশি মুসল্লি একসঙ্গে টয়লেট ব্যবহার করতে পারবেন। দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এ পর্বেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

নিরাপত্তা: গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রথম পর্বে চেয়ে ২য় পর্বে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের কামরায় বিশেষভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। এ ছাড়া যাতায়াতের সুবিধার্থে ট্রাফিক ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তায় সিসিটিভি, ওয়াচ টাওয়ার থেকে পুরো ময়দান মনিটরিং করা হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের সেবা: দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমায়ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন আগত মুসল্লিদের ২৪ ঘণ্টা সেবাদান করবে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রথম পর্বে যেসব সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে তা দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায়ও অব্যাহত থাকবে।

বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা: প্রথম পর্বের ন্যায় ২য় পর্বেও বিপুল পরিমাণ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইজতেমা মাঠে আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ বিতরণ করবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, হামদর্দ, ইবনে সিনা, যমুনা ব্যাংক, সিটি করপোরেশন, র‌্যাব, সিভিল সার্জন কার্যালয়, ইসলামী ফাউন্ডেশনসহ প্রায় অর্ধশত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত এসব সেবা অব্যাহত থাকবে।

দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মেহমান ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন। আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে ইনশাআল্লাহ।