বছরের ব্যবধানে মসলার পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ

img

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঈদুল আজহার আগে মসলাজাতীয় পণ্যের চাহিদা বাড়ে । সঙ্গে এসব পণ্যের দামও বাড়ে । এবারও ব্যতিক্রম নয় । তবে এবার অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে । বিশেষ করে পাইকারি বাজারে জিরা ও আদার দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি । এছাড়া রসুন, হলুদ, মরিচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচসহ অন্যান্য মসলার দামও চড়া । রবিবার পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ও বেগম বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে ।  

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের( ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলছেন, শুধু বাজার মনিটরিং করেই দাম কমানো সম্ভব না । যেসব কারণে দাম বাড়ছে সেসব কারণ ধরে ধরে কাজ করতে হবে ।   সরেজমিনে পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ইরানিয়ান জিরা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা কেজি দরে । আর ভারতীয় বা অন্যান্যগুলো বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকা কেজি । অথচ গত ঈদেও এই জিরার দাম ছিল ৪৫০ টাকা । আর আদার দাম একই সময়ের ব্যবধানে ১২০ থেকে বেড়ে ৩৬০ টাকা হয়েছে ।   অথচ ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের( টিসিবি) তথ্যমতে, ২০২২ সালের ২২ জুন প্রতি কেজি জিরা সর্বনিম্ন ৩৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে । আর একই সময়ে আমদানি করা আদা ৬০ থেকে ১২০ এবং দেশি আদা ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে । অর্থ্যাৎ বছরের ব্যবধানে আদার দাম তিন থেকে পাঁচগুণ বেড়েছে ।   আমদানি করা রসুন কেজি- প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে । যেটি খুচরা দোকানে ১৮০ টাকা কেজিতে কিনতে হয় । আর দেশি রসুন পাইকারি দর কেজি- প্রতি ১২০ টাকা এবং খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায় । বছর খানেক আগে টিসিবির হিসাবে দেশি রসুন বিক্রি হয়েছিল ১১০ থেকে ১৪০ টাকায় এবং আমদানিকৃত রসুনের দাম ছিল কেজি প্রতি ৭০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ।   লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা কেজি । এক বছর আগে এর দাম ছিল ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা । আর গত দুমাস আগেও( এপ্রিল) ১৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে ।   দারচিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ থেকে ৫২০ টাকায় । যা এপ্রিল মাসেও বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা কেজিতে । ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা । যেটি গত এপ্রিল মাসেও বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা ।   গত দুই মাসে এলাচের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০০ টাকার মত । মানভেদে মসলাটি বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ২৮০০ টাকা । এপ্রিল মাসেও এলাচ বিক্রি হতো ১৪০০ টাকা কেজিতে । কিচমিচ লম্বাটি বিক্রি হচ্ছে ৪১০ থেকে ৪২০ টাকা কেজি । গোল জাতেরটি বিক্রি হচ্ছে ৪৩০ থেকে ৪৪০ টাকা কেজি । আলু বোখারা বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ থেকে ৪৬০ টাকা কেজি ।   বর্তমানে দেশি হলুদের কেজি- প্রতি পাইকারি দর ২৫০ টাকা এবং খুচরা দাম ৩০০ টাকা । অন্যদিকে আমদানি করা হলুদের পাইকারি দাম ২০০ টাকা এবং খুচরা দাম ২৩০ টাকা কেজি । গত বছরের এই সময়ে দেশি হলুদের দাম ছিল ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে এবং আমদানি করা হলুদের দাম ছিল আরও কম ১৬০ থেকে ২৪০ টাকার মধ্যে । এদিকে পাইকারি বাজারে আমদানি করা লাল মরিচ ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা কেজি দরে এবং খুচরা বাজারে লাল মরিচ ৪৫০ থেকে ৪৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে । অন্যদিকে দেশি মরিচের পাইকারি দর ৩৮০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৪৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে । অথচ এক বছর আগেও দেশি শুকনা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৭০ টাকায় । অন্যদিকে আমদানি করা শুকনা মরিচের দাম পড়তো ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা ।  

মৌলভীবাজারের মসলা ব্যবসায়ী মেসার্স ফাহিম স্টোরের মালিক মো. ফাহিম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমি বড় পাইকারদের কাছ থেকে কিনে বিক্রি করি । তারা আমার কাছ থেকে যে দাম নেয় আমিও সেই হিসেব করেই বিক্রি করি । তারা সম্প্রতি আমার কাছ থেকে বেশি দাম নিয়েছে তাই আমিও বেশি দাম বিক্রি করতে বাধ্য ।   ফাহিম বলেন, তবে এবার মসলার বাজার অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি । আমরাও বুঝতে পারছি মানুষের কষ্ট হচ্ছে । আগে লোকজন যেখানে বেশি কিনতো এখন কমিয়ে কিনছে । আমি খুচরাও বিক্রি করি । লোকজন ১০০- ২০০ গ্রাম কিনতে চাইলেও দেয় ।  

মৌলভীবাজারের আবাবিল মসলা ঘরের ম্যানেজার মিজানুর রহমান মিজান বলেন, আমরা ইরানি জিরা বিক্রি করছি এক হাজার টাকায় । আর অন্যান্যগুলো ৯৫০ টাকায় ।   দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মিজান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারেই দাম বেড়েছে । সঙ্গে পরিবহনেও খরচ বেড়েছে । তাই দাম এতো চওড়া । এছাড়া বড় ব্যবসায়ীদেরও কিছু কারসাজি থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি ।  কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের( ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের বেশিরভাগ মসলাই আমদানি করা লাগে । টাকার মান কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, আমাদের দেশে দাম বাড়ার অন্যতম একটি কারণ । এর মধ্যে কিছু ব্যবসায়ীদেরও কারসাজি আছে । তবে যে পরিমাণ বেড়েছে সে পরিমাণ বাড়া ঠিক হয়নি ।   ক্যাব সভাপতি বলেন, শুধু বাজার মনিটরিং করেই দাম কমানো সম্ভব না । যেসব কারণে দাম বাড়ছে সেসব কারণ ধরে ধরে কাজ করতে হবে । আমরা ভোক্তাদের জন্য বললেও যারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে তারাতো আমাদের কথা শুনে কাজ করছে না ।   গোলাম রহমান সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাজার নিয়ন্ত্রণে সঠিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান ।