সব যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

img

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ সব যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নারী ও শিশুরা। আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না। একজন নারী রাজনীতিবিদ বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, একজন মা হিসেবে আমি বিশ্বনেতাদের যুদ্ধ বন্ধ করতে, অস্ত্রের খেলা এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্ব যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করছে- প্রথমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এখন ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের হামলা।’

মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় জয়িতা টাওয়ার উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে নারী উদ্যোক্তা ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়া সরকারে এসে নারীদের অধিকারের কথা বাতিল করে দিয়েছিল বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীরাঙ্গনাদের আমরা সরকারে আসার পরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমি বলব, আমরা নারীরা কেন পিছিয়ে থাকব, বেগম রোকেয়াই তো প্রথম আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। নারী শিক্ষার জন্য বেগম রোকেয়ার যে অবদান এবং তিনি স্বপ্ন দেখতেন, নারীরা একদিন জজ ব্যারিস্টার হবে। আজকে দেখুন আমাদের দেশে সব জায়গায় নারীরা আপন স্থান করে দিয়েছে। আজকে রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি প্রতিটি জায়গায় যাতে আমাদের নারীরা সমসুযোগ পায় সেই ব্যবস্থা আমি ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে করে দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের উচ্চ আদালতে কোনো মহিলা জজ ছিল না। একরকম জোর করেই আমি রাষ্ট্রপতিকে বলেছিলাম, যে ফাইল পাঠাবেন, যদি ওই ফাইলে কোনো নারী জজের নাম না থাকে তাহলে আমি কিন্তু ফাইল কার্যকর করব না। কারণ রাষ্ট্রপতির ফাইল তো প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমেই যায়। আজকে আমাদের উচ্চ আদালতে নারীরা স্থান পেয়েছে। কোনো সচিব ছিল না, কোনো জেলায় কখনও ডিসি করা হতো না। আমি সরকারে আসার পর আমাদের সাহারা আপাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করেছিলাম। কিন্তু আমাদের মেয়েরা শুধু পুলিশেই না, প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে। মনে আছে, প্রথম যখন আমি এসপি করতে চাইলাম, আমাদের পুরুষশাসিত সমাজ অনেকেই বললেন, একজন মহিলা কীভাবে এসপি হবে? আমি ধন্যবাদ জানাই, সেই রওশন আরাকে, তাকে প্রথম আমি মুন্সীগঞ্জের এসপি করলাম। মুন্সীগঞ্জে যেয়েই প্রথম সে ডাকাত ধরল। সে ডাকাতও ধরল সেইভাবে, একহাতে রিভালবার, একহাতে ডাকাত ধরে নিয়ে আসলো। আমি বললাম এখন কেমন হলো? জাতির পিতা তো বলেছেন, আল্লাহতায়ালা মানুষকে সমান শক্তি দিয়ে পাঠিয়েছেন। শক্তিটা কাজে লাগাবার সুযোগতো দিতে হবে। সেই সুযোগটা আমরা দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেখি অনেক দেশে নারীদের পড়তে দেয় না। লেখাপড়া শেখায় বাধা দেয়। নানা রকম নির্যাতন হয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, প্রথম ইসলাম ধর্ম কে গ্রহণ করেছিলেন? আমাদের নবী করিম (সা.) যখন ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন, কই কোনো পুরুষ তো সাহস করে আসে নাই, এসেছিল একজন নারী। প্রথম বিবি খাদিজা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৭ সালে নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ণ করলাম। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারি নাই। খালেদা জিয়া সরকারে এসে নারীদের অধিকারের কথা বাতিল করে দিল। জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে সরকার গঠন করেছিল। জামায়াতে ইসলামসহ তাদের যে ২০ দলীয় জোট তারা নারীদের সব অধিকার বন্ধ করে দিল। আবার যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করলাম। আবার আমরা সেই নীতিমালা প্রণয়ন করি, বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই আমরা এসএমই ফাউন্ডেশন করেছি। এসএমই ফাউন্ডেশনে যারা নারী উদ্যোক্তা হবেন মাত্র ৫ শতাংশ সুদে টাকা নিতে পারবেন। সেই সুযোগ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা আছে। আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছি। সেখানে কোনো নারী উদ্যোক্তা থাকলে তাদের প্লট দেওয়ার ব্যবস্থা আমি রেখেছি।’

প্রধানমন্ত্রী  বলেন, ‘আজকে আমরা সমস্ত গ্রামে বিদ্যুৎ দিয়েছি, মোবাইল ফোন সকলের হাতে হাতে আছে। তাছাড়া ইন্টারনেট সারা বাংলাদেশে আমরা চালু করে দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। ওয়াইফাই কানেকশন আছে। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ উৎক্ষেপণ করেছি। মেয়েরা সবাইকে শহরে চলে আসতে হবে না। গ্রামে বসে কাজ করতে পারবে। নিজের গ্রামে বসেই উদ্যোক্তা হতে পারবে। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং অর্থাৎ শেখো এবং আয় করো- আমরা সেই প্রশিক্ষণও দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী  বলেন, ভাষা শেখার জন্য বিভিন্ন ভাষা শেখার অ্যাপ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। মেয়েরা যাতে ভাষা শিখতে পারে, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিতে পারে, স্কুল থেকেই প্রশিক্ষণ নিতে পারে সেই জন্য ল্যাব তৈরি করে দিয়েছি। ঘরে বসে দেশে বিদেশে অর্থ উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে সেটা করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটা কথা সব সময় বলতেন যে অধিকার অধিকার বলে চিল্লালে হবে না । অধিকার হবে তখনই, একটি নারী যখন ১০টাকা উপার্জন করে আঁচলে বেঁধে ঘরে আসে, তো ওই পরিবারে তার একটা স্থান হয়। তার কথার একটা মূল্য থাকে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। এই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে পারলেই আজকে মেয়েদের কারো মুখোমুখি হয়ে থাকতে হবে না।