বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো ঝামেলার তাৎক্ষণিক সমাধান দিতে হবে: রাষ্ট্রপতি

img

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ধরনের ঝামেলার সৃষ্টি হলে সেটার দায় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। তিনি যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে আচার্য হিসেবে অংশ নিয়ে এ আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে জ্ঞান অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, লাশ হয়ে হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য নয়। কর্তৃপক্ষ সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।’

‘তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর দায় একেবারে এড়াতে পারে না। আশা করব ভবিষ্যতে কর্তৃপক্ষ সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেবে।’

গত ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে পিটিয়ে হত্যা করে ওই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী।

বুয়েটের এই হত্যাকাণ্ড ছাড়াও দেশের বেশ কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিতও হয়। এতে করে বেশ খানিকটা সময় একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অমানবিক ও অনভিপ্রেত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও শিক্ষার্থীদের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।’

পদ-পদবী পেয়ে শিক্ষকরা নিজেদের কাজ ভুলে যাচ্ছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, কোনো কোনো উপাচার্য ও শিক্ষকের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল কাজ কি তা ভুলে গেছেন।

মা-বাবার আশা-আকাঙ্ক্ষা, কষ্ট ও ত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, “তোমাদের মূল দায়িত্ব হলো লেখাপড়া করা এবং দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলা। তোমরা এমন কোনো কাজ করবে না যাতে তোমাদের পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়।”

‘তোমাদের মূল দায়িত্ব হলো লেখাপড়া করা এবং দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলা। তোমরা এমন কোনো কাজ করবে না যাতে তোমাদের পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুণ্ন্ন হয়।’

ডাকুস নেতাদের কথা যা শুনি ভালো লাগে নারাষ্ট্রপতি বলেন, “ডাকসু নির্বাচন হলো, আশা করছিলাম, এই ডাকসু নেতারা কথাগুলো বলবে। দাবি-দাওয়া করবে। আমি কেন বলবো? আমি চ্যান্সেলর। আমাকে কেন বলতে হবে? ছাত্রনেতাদের এসব কথা বলা উচিত। তারাতো এ ব্যাপারে কোনো কথা বলে না। বরং তাদের ব্যাপারে অন্য এমনসব কথা শুনি, যেগুলো আমার ভালো লাগে না। এর বেশি কিছু বলে আমি কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চাই না। তাদের কর্মকাণ্ড আমার ভালো লাগে না। ছাত্রদের কল্যাণ তাদের টপ প্রোয়োরিটি দেওয়া উচিত।

“এই ছেলেরা যদি বলতো, আপনিতো আমাদের ইউনিভার্সিটিতে চান্সই পাননি। ছাত্র খারাপ ছিলেন, আপনার কাছ থেকে ডিগ্রি নিতাম না। এই কথা বললে অযৌক্তি হবে না, এটা সত্য। এ কথা বললে আমি কইতাম, আমি আর আইতাম না। ভবিষ্যতে কোন পণ্ডিত-গুণী-জ্ঞানী-ব্যক্তিকে পাঠায়া দিয়া বলতাম সভাপতিত্ব করে ডিগ্রি দিয়া আসেন। এই দাবি করলেও মানতে অসুবিধা নেই। তারা মনে করতে পারে, আমি ম্যাট্রিক থার্ড ডিভিশন, ইন্টারে লজিক রেফার্ড পাইছি। এই ধরণের ছাত্রে কাছ থেকে ডক্টরেট-পিএইচডি নেওয়া কি শোভা পায়? এই ধরণের কথা যৌক্তিক ছিল। তাদের দাবি একসেপ্ট করব।”

ভেজাল ওষুধ, ছাত্রদের এগিয়ে আসার আহ্বান রাষ্ট্রপতি বলেন, “আজকে এমবিবিএস আর ফার্মেসি সার্টিফিকেট দিছি। ডাক্তার সাহেবরা সমানে প্রেসক্রিপশন দেয়। মফস্বলে যে মেডিসিন দেয় তা মেয়াদ উত্তীর্ণ থাকে। আমি অনুরোধ করবো, ডাক্তার-ফার্মাসিস্ট এ বিষয়টি দেখবেন। নিজে ওষুধগুলো পরীক্ষা করে দেখবেন। মেয়াদ পার হয়ে গেলে বিষ হয়ে যায়।

“ওষুধ নাকি ২-৩ রকমের হয়, বেস্ট কোয়ালিটি বিদেশে যায়। এক প্রকার ঢাকায় আর মফস্বলে খারাপ কোয়ালিটিরটা যায়। ছাত্র সমাজকে এ বিষয়টি রুখে দিতে হবে। এ নিয়ে সজাগ থাকা দরকার। ভেজাল ওষুধ নিয়ে সতর্ক থাকা দরকার। জাতি হিসেবে না হয় পঙ্গু হয়ে যাব।”

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও গবেষকদের হাতে সনদ তুলে দেন আচার্য আবদুল হামিদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বেলা ১২টায় উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্ততা দেন জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক রে রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক তাকাকি কাজিতা। অনুষ্ঠানে তাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব সায়েন্স’ ডিগ্রি দেওয়া হয়।

সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল্লাহ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিনেট, সিন্ডিকেট, হল প্রভোস্টসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং নিবন্ধিত শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাবির ৫২তম সমাবর্তনে অংশ নিতে নিবন্ধিত হন ২০ হাজার ৭৯৬ জন স্নাতক ডিগ্রিধারী। তাদের মধ্যে ১০ হাজার ৬৭৩ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী। আর অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থী ১০ হাজার ৪৪ জন।

সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ২০ হাজার ৭১৭ জনকে ডিগ্রি দেওয়া হয়। কৃতিদের মধ্যে ৯৮টি স্বর্ণ পদক দেওয়া হয়।