সাংবাদিকতার ঝুঁকি বেড়েছে বাংলাদেশেও: টিআইবি

img

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও সাংবাদিকতার ঝুঁকি বেড়েছে উল্লেখ করে ট্রান্সফারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, চাপের মুখে থেকেও সাংবাদিকতার মান ও নৈতিকতার সাথে আপোষ না করে নিজেদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচারের মাধ্যমে পেশাগত উৎকর্ষ সাধন নিশ্চিত করতে হবে।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) টিআইবির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ: প্রেক্ষিত গণমাধ্যম জবরদখল শীর্ষক একটি আলোচনা এবং দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ঘোষণা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

টিআইবির নির্বাহী ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতই বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমও ঝুঁকির মধ্যে আছে। বিশেষ করে এই দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য ঝুঁকিটা বেশি। এর মধ্য দিয়েই সাংবাদিকদের টিকে থাকতে হবে। চাপের মুখে থেকেও সাংবাদিকতার মান ও নৈতিকতার সাথে আপোষ না করে নিজেদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচারের মাধ্যমে পেশাগত উৎকর্ষ সাধন নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানের মূল আলোচক টিআইবির ন্যায়পাল অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, সব সাংবাদিকতাই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। কারণ সব খবরই সন্ধান করে বের করতে হয়। তবে অনেক সংবাদ আছে যেগুলো প্রতিকূলতার মধ্যে বের করে আনা লাগে।  অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভিত্তি খুবই নৈতিক। যখন দুর্নীতি, সহিংসতার মতো বিষয়গুলো বাড়ে তখন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রয়োজন হয়।

তিনি বলেন, আমাদের অনেকে অনলাইনকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছে। কিন্তু কেনো? এখন জিডিটালাইজেশনের যুগে সংবাদ মাধ্যমে প্রযুক্তির ছোয়া লেগেছে।  অনলাইন গণমাধ্যম বিকশিত হচ্ছে। তবে আমাদের সমস্যা হচ্ছে সাংবাদিকতাকে অনেকে চাকরি হিসেবে নিচ্ছেন। পেশা হিসেবে নিতে পারছেন না। যে কারণে পেশাটা নিয়ে নানা কথা বের হচ্ছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি নিজেকে একজন শিক্ষক পরিচয় দিতে এখন লজ্জা লাগে। কারণ এ পেশাটাও এখন আর শিক্ষকতায় নাই। চাকরি হিসেবে নিচ্ছে সবাই। যে কারণে ছাত্র নেতাদের ধমকে শিক্ষকরা ভয় পান। আগে শিক্ষক সমিতি অনেক কার্যকর ও শক্তিশালী ছিল। কোনো আন্দোলন হলে পরবর্তী কর্মসূচির জন্য গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘুর ঘুর করত এ শিক্ষক সমিতির কর্ণধারদের কাছে। কিন্তু এখন শিক্ষকদের কোনো ভিত নেই।

টেলিভিশন সাংবাদিকদের সমালোচনা করে এ অধ্যাপক বলেন, যারা বিভিন্ন ইভেন্টে লাইভ দেন তারা অনেক কষ্ট করেন। কিন্তু একসঙ্গে ১০ টি বাংলা শব্দ বলা মনে হয় খুব কষ্ট হয় তাদের? তারা লাইভে- যেমনটি বলছিলাম, আপনি যেমনটি জানেন, আমি এখন আছি ওমুক স্থানে, তখন, আসলে, কিন্তু, অ্যা,- এসব শব্দ বলতে বলতে তারা সময়ক্ষেপণ করে। কিন্তু এমন করতে হবে কেনো। তুমি কোথায় কোথায় আছো সেটা তো টিভির স্কিনে লেখায় আছে। সেটা বারবার বলার তো কোনো দরকার নেই। এসব দেখলে ভাবি বাংলা ভাষার এতো দুর্দিন আমি কখনো দেখিনি।  অথচ বিদেশী সাংবাদিকদের দেখেন। তারা খুব অল্প সময়ে অনেকগুলো বিষয়ে কথা বলেন। টু দ্য পয়েন্টে কথা বলেন।

এ সময় সাংবাদিক জুলফিকার আলী মানিক বলেন, সাংবাদিকতা এখন প্রচারযন্ত্র হয়ে গেছে। মাইক্রোফোনের মতো। কিন্তু এই সময়ে দেশের প্রেক্ষাপটে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বেশি হওয়ার কথা ছিল। সাংবাদিকদের যে চরিত্র ছিল সেটা পরিবর্তন হয়েছে।  নিজেদের সুখ, স্বাচ্ছদ্য, ভোগ বিলাস নিশ্চিতের জন্য সাংবাদিকরা দৌড়াচ্ছেন। সাংবাদিক হিসেবে গণমানুষের কণ্ঠ হতে হবে তা হতে চায়ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্বের অভাব ও স্বাধীনতার অভাব রয়েছে। পোশাদারিত্ব না থাকায় গণমাধ্যম জনগণের জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।

তিনি আরও বলেন, মার্কেট যাচাই না করেই মিডিয়া বাজারে আসছে। কিন্তু বিশ্বে যেখানে পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের নতুন নতুন পত্রিকা বের হচ্ছে। এ কারণটাও আমাদের সীতি নির্ধারকদের বের করতে হবে। 

আলোচনা শেষে টিআইবির দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এবছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ১০ জন সাংবাদিককে এই পুরস্কার দেয়া হয়।