বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু কাল, তুরাগ তীরে মুসল্লিরা

img

গাজীপুর প্রতিনিধি:

তাবলিগ জামাতের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার ২য় পর্বে অংশ নিতে মুসল্লিরা এখন টঙ্গীর তুরাগ তীরে। শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে। এ পর্বে যোগ দিতে আজ বৃহস্পতিবার থেকেই সা’দ কান্দলভির অনুসারীরা নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। আগামী ১৯ জানুয়ারি (রবিবার) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা।

ইজতেমাকে সর্বাত্মকভাবে সফল করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রথম পর্বের ন্যায় এ পর্বেও সতর্ক নজরদারি ও সিটি করপোরেশন এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিন শুক্রবার থাকায় ময়দানেই জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।

এ জামাতের নেতৃত্বে রয়েছেন শূরা সদস্য মাওলানা আবদুস সাত্তার। এ জামাতকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম ও মুফতি ইজাহার আহমেদ। এদিন ইজতেমার বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিতদের উদ্দেশে বিশেষ বয়ান (নজমের বয়ান) করেন ভারতের মাওলানা মুফতি রিয়াজুর রহমান। আগত মুসল্লিরা যাতে কষ্ট না পান, তাদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়- বয়ানে সেদিকে গুরুত্ব দেন তিনি।

এছাড়া বিভিন্ন দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন কমিটি করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, দ্বিতীয় পর্বেও প্রথম পর্বের মতো বহুমাত্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৮ হাজার সদস্য এ কাজে নিয়োজিত থাকবেন।

আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য প্রকৌশলী শাহ মো. মুহিবুল্লাহ জানান, ময়দানের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। তাবলিগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুতি ছাড়াও ডেসকো, তিতাস, ওয়াসাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলো তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সরকার মুসল্লিদের সুবিধার্থে ইজতেমা মাঠে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। ১৩টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে ২য় পর্বেও প্রায় সাড়ে ৩ কোটি গ্যালন খাবার পানি ও ওজু-খোসলের পানি সরবরাহ করা হবে। ৮ হাজারের বেশি মুসল্লি একসঙ্গে টয়লেট ব্যবহার করতে পারবে। দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এ পর্বেও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার তিন দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে হকিকত, আম ও খাসবয়ান, দরসে কুরআন, দরসে হাদিস, তাশকিল, মাসলা-মাসায়েল আলোচনা, চিল্লায় নাম নিবন্ধন, নতুন জামাত তৈরি, তালিম, গাস্তের নিয়ম-কানুন শেখানো, ফাজায়েলে আমল, আখলাক ও আদব সম্পর্কে আলোচনা ও যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জানান, বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও থাকছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। র‌্যাব, পুলিশ ও সাদা পোশাকে থাকছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় আট হাজার সদস্য। পুরো ইজতেমা ময়দান জুড়ে সিসিটিভি, ওয়াচ টাওয়ার ও মেটাল ডিটেক্টরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। নিরাপত্তা বলয় থাকবে ইজতেমা মাঠ ও মাঠের বাইরে।

প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতের পর দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠানের জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ইজতেমা মাঠের দায়িত্ব বুঝে নেন। গত বুধবার বাদ মাগরিব মাওলানা সা’দ অনুসারী দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের ৩২ সদস্যের দল ময়দানে এসে পৌঁছে।

শুক্রবার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা চেরাগ আলীর আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বিশ্বইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। এ বয়ানটি বাংলায় তরজমা করবেন বাংলাদেশি মাওলানা আশরাফ আলী। বৃহস্পতিবার বাদ আছর থেকেই শুরু হয়েছে প্রাক বয়ান। প্রাক বয়ান শুরু করেন বাংলাদেশে সা’দ পন্থীর নেতৃত্বদানকারী মুরুব্বি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা শামীম ও তা তরজমা করেন বাংলাদেশি মাওলানা জিয়া-বিন কাশেম।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রথম পর্বে চেয়ে ২য় পর্বে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের কামরায় বিশেষভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়া যাতায়াতের সুবিধার্থে ট্রাফিক ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তায় সিসিটিভি, ওয়াচ টাওয়ার থেকে পুরো ময়দান মনিটরিং করা হচ্ছে।

বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রথম পর্বের ন্যায় ২য় পর্বেও বিপুল পরিমাণ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইজতেমা মাঠে আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ বিতরণ করবে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, হামদর্দ, ইবনেসিনা, যমুনা ব্যাংক, সিটি কর্পোরেশন, র‌্যাব, সিভিল সার্জন কার্যালয়, ইসলামী ফাউন্ডেশনসহ প্রায় অর্ধশত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আখেরি মোনাজান পযর্ন্ত এসব সেবা অব্যাহত থাকবে।